আতিকউল্লাহ সাদিক প্রথম দুই দিন ঝিম মেরে ছিল। গভীর সমুদ্রে নিম্নচাপের মত। তৃতীয় দিন তার ক্রোধের বিস্ফোরণ ঘটে। তখন সে খুব চিৎকার করতে থাকে।
-চম্পা; চম্পা আআআআ !
চম্পা তখন ওর ছোট বোন টুম্পার সাথে ফোনে কথা বলছিল।
-এই বুবু, ঈদের দিনেও আতিক্যা অমন হাম্বা হাম্বা করতাছে কেন রে?
-জানিনা। কয়দিন ধইরা সে এল-নিনোয় আক্রান্ত হইছে। মনে হয় ব্যবসায় লস খাইছে
-নতুন কোন ব্যবসা আবার?
-হ
-কিসের?
-মরুভূমিতে রুম হিটার সাপ্লাইয়ের
-যাহ; কী হইছে ঠিক কইরা ক। ওকে ঠকাস নাই তো? তোর প্রেম, পুরান প্রেমিক এসব কী জানি কইতাছে?
টুম্পার শেষ প্রশ্নের কোন জবাব চম্পা দেয়না। উত্তেজনায় মোবাইল না কেটেই সে আতিকুল্লাহর সাথে যেন সম্মুখ রণেতে নামে। টুম্পা মোবাইল ডিসকানেক্ট না করে সব শুনতে থাকে।
-আমার পচিশ বছর আগের প্রেম নিয়া এমন করতাছ?! তেইশ বছর তো সংসার করলা। কী করতে চাও এখন? ডিভোর্স? আমি প্রস্তুত !
আতিকউল্লাহর চেয়ে দ্বিগুন জোরে চিৎকার করে চম্পা জবাব দেয়।
চম্পার গলার স্বরে আতিকউল্লাহ কিছুটা নার্ভাস হয়ে পড়ে। সে আর কথা বাড়ায়না। তবে তখন পাশেই অবস্থান করা সন্তানকে সব বলে দেয়! সব মানে চম্পার পুরান প্রেমিক ইনবক্সে আতিকউল্লাহকে সত্যমিথ্যা যা কিছু বলেছে তার সবই। মোবাইলের অন্যপাশ থেকে টুম্পা সব কথাই শুনে।
ঈদের দিনেও আতিকউল্লাহর অমন কান্ড দেখে টুম্পার মন বিষন্ন হয়। সে মোবাইল ডিস্কানেক্ট করে বেশ কিছুক্ষণ ভাবে। তারপর সে চম্পাকে একটা টেক্সট করেঃ
“ডিভোর্সের জন্য যতো বড় যুক্তিই থাকুক না কেন ডিভোর্স করলি তো তুই বাতিল মেয়ে মানুষের ক্লাবে আজীবন সদস্য হয়ে গেলি। অথচ অনেক দেশে তোদের মত করে এভাবে জোড়াতালি দিয়ে থাকার ভাবনাটাকেই বাতিল করে দেয়।”
ছোট বোন টুম্পার মেসেজটা চম্পা গুরুত্ব দিয়ে পড়ে। কিন্তু জবাব না দিয়ে সে গলির রাস্তায় একজনকে নিবিরভাবে দেখতে থাকে। লোকটার পরনে প্রায় হাটু পর্যন্ত লম্বা ধবধবে সাদা স্যান্ডু গেঞ্জি এবং একই রঙের পায়জামা। সে সম্মুখের রাস্তা দিয়ে ঘনঘন যাওয়া আসা করছিল। তার পুরো গায়ে গরুর রক্ত। বুঝতে সমস্যা হয়না যে, এই কুরবানীর ঈদে সে একজন হেড কসাই।
লোকটাতে চম্পা একবার তার পুরান প্রেমিকের মুখ দেখে; একবার তার স্বামী আতিকুল্লাহ সাদিকের। কোথাও জীবনানন্দের খোঁজ পায়না!
loading...
loading...
অনেক দেশে এভাবে জোড়াতালি দিয়ে থাকার ভাবনাটাকেই বাতিল করে দেয়। আপনার অণুগল্প থেকে এই লাইনটা ধরে আনলাম এই কারণে যে দীর্ঘ জীবন প্রবাসী হওয়ায় এমন সিচুয়েশন আমি অনেক প্রত্যক্ষ করেছি। যতই আমরা বাঙ্গালী রক্ষণশীল পারিবারিক ঘরানার হইনা কেন। দুই জীবনের কাউকেই সুখি হতে দেখিনি।
স্বাতন্ত্রিক পরিবেশনায় আপনাকে ধন্যবাদ ভাই।
loading...
খুব ছোট পরিসরে পূর্ণাঙ্গ একটি চলচ্ছবি দাঁড় করিয়েছেন। আমি অণুগল্প লিখতে পারি না, তবে পাঠক চোখে মনে হয়েছে আতিকউল্লাহ সাদিক সাহেবকে আরেকটু ফোকাসে আনা যেতে পারতো। মরুভূমিতে রুম হিটার সাপ্লাইয়ের বিষয়টিতে আনন্দ পেয়েছি।
loading...
অণুগল্পটি পড়ে অনেকক্ষণ ধরে বসে আছি আপনার পোস্টে। ভাবছি কি মন্তব্য হতে পারে। উপরে দুটি মন্তব্যে আমার কথাও বলা আছে। যাকগে শুভেচ্ছা প্রিয় মিড দা।
loading...
লোকটাতে চম্পা একবার তার পুরান প্রেমিকের মুখ দেখে; একবার তার স্বামী আতিকুল্লাহ সাদিকের। কোথাও জীবনানন্দের খোঁজ পায়না!
* ভাবের গভীরতায় মুগ্ধ, লেখনি শৈল্পিক মানসম্মত….


loading...
পায়চারীরত লোকটা। কুরবানীর ঈদে সে যেন একজন হেড কসাই।
তাহলে কি সন্দেহ করবো পুরোনো প্রেমিক অথবা আতিকউল্লাহ সাদিক দুজনের একজন বধ হবেন !! চম্পা নিশ্চয়ই অতোটা বর্বর হবেন না। অণুগল্পটি আধা রম্য আধা বিষণ্নতা আধা নস্টালজিয়ার দারুণ কম্বিনেশন হয়েছে মি. মিড ডে ডেজারট।
loading...
শব্দ কথায় মানসচক্ষে যেন একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র দেখলাম। কিন্তু কসাই নামে ভয় পেয়েছি ডিজারট ভাই। ভালোবাসা থাক।
loading...
loading...
আপনার লেখা এবং মন্তব্য দুটোই আমার ভালো লাগে। শুভেচ্ছা জেনে নেবেন।
loading...
মনে হচ্ছে চম্পা এই হেড কসাই'র সাথে তাঁর পুরানো প্রেমিক ও বর্তমান স্বামীকে তুলনা করেছেন। এতে বুঝা যায় চম্পা বিয়ের আগেও শান্তির মুখ দেখেনি, বিয়ের পরে না। আসলে বাস্তবে এমন অশান্তি এই সমাজের শুধু মেয়েদেরই বেলায় নয়, অনেক পুরুষের বেলায়ও।
শ্রদ্ধেয় লেখককে অসংখ্য ধন্যবাদ।
loading...